টিউলিপ বাগান


ইতিহাস বরাবর কষ্টের। দশ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর কম করে দশ পাতা। আমি এক পাতা লিখেই ফতুর। শেষে দিলীপবাবুর চেতাবনি মনে পড়ায়, পেছন পাতায় ছবি এঁকে ডবল করে বুঝিয়ে দিয়েছি পলাশী প্রান্তর। যুদ্ধের বর্ণনা। আমবাগান সুদ্ধ। পাশে যে বসেছিল, তার নাম মনে নেই। মুখটা মনে আছে। সে গোল গোল চোখে আমার কিত্তি দেখছিল। আমি ভাবছিলাম বোধহয় প্রশংসা। তাই সিলেবাসের বাইরে বেরিয়ে একটা পাখি আঁকলাম। ঠুকরে পাকা আম খাচ্ছে। মোটের উপর পরীক্ষা দিয়ে ফুরফুরেই লাগছিল। বাড়ি ফিরেছিলাম বেশ গর্বিত কাত হয়ে। ভেবেছিলাম, পলাশী একাই রেজাল্টে বাহার আনবে। পুরো টিউলিপের বাগিচা। শেষে পাঁচ বা সাত পেয়ে বুঝলাম, উল্টো বুঝেছিলাম। টিউলিপ বাগিচা বলে আসলে কিছু হয় না।

অনেক পরে একজন বিখ্যাত লেখক বললেন, এটা লেখ। টিউলিপের বাগিচা বলে আসলে কিছু হয় না। এটাই শিরোনাম। টিউলিপ বাগিচা বলে আসলে কিছু নেই ভাবলে আর লিখব কেন? ঘুড়ি ওড়াব কেন? কেনই বা প্রেমে পড়ব? টিভিতে গোবিন্দ তখন গীত গেয়ে গেয়ে তুরুক তুরুক নাচত, দিল বহলতা হ্যায় মেরা, আপকে আ জানে সে। এ তো আমার প্রেমের শিরোনাম। গোবিন্দকে নকল করে বা না করে মনের টিউলিপ বাগানে কত নেচেছি। উদোম নাচ। শুধু প্রকাশ্যে নেচে নেচে গাইতে পারব না বলে, টিউলিপ বাগান মিথ্যা!  প্রেমিক জাতিতে অসহায়। জন লেননের, জেলাস গাই—ঘুমন্ত আকাশে লাল নীল জাগ্রত ঘুড়ি। কখন ঘুড়ি ভোকাট্টা হয় শুধু সেই ভয়। তনুদা ঘুড়ি আকাশে তুলে লাটাই হাতে গুঁজে দিয়েছিল, বিশ্বাস করে। কথা ছিল ধরে রাখার। আমি লাটাই উজাড় করে দিয়েছি। ঘুড়ি যেতে চাইছিল, বাধা দিইনি। ঘুড়িটা একটা বিন্দু হয়ে তখন বহু দূর আকাশে টলমল করছিল, দেখলাম নীচ থেকে একটা ঘুড়ি বাড়ছে। তনুদা পাশেই। মন দিয়ে কীসব যেন করছিল। ডাকলেই ডাকতে পারতাম—

অনেক দূরে যে ভোওওকাট্টা বলে চিৎকার করে উঠল, তাকে আমি চিনি না।   

আমার বিন্দুটা সুতো-ছাড়া হয়ে কোথায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। ভাবছি, যাচ্ছে টিউলিপ বাগিচার দিকে। এখন আর বৃষ্টি না হলেই ভালো।   

Comments