বিরাট এক গোল্লা

 আপনার বাচ্চাটা চোখের সামনেই কেমন চৌবাচ্চা হয়ে গেল--- কিছুতেই আর আগের মতো কাছাকাছি আসে না, দূরে দূরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।  ভাবলেন একদিন সেই কথা সোজাসুজি বলবেন। বলতে গিয়ে সোজা কথা একটু বেঁকে বেনারসের ট্রেন ধরল। ভাবলেন ট্রেনেই বলবেন। ট্রেন ছশো সত্তর কিলোমিটার ঝিকঝিকাইল। ‘সেই কথা’ বলার সুযোগটাই পেলেন না। বারাণসী জংশনে নেমে ভাবলেন, হোটেলে গিয়ে বলবেন। হোটেলে ঢুকেই খিদে পেয়ে গেল। যাক গে সন্ধ্যায় নৌকোয় উঠে বললেই হবে। তারপর মুহূর্ত মিনিট ঘণ্টা ফটাফট কেটে গিয়ে অন্ধকার হয়ে গেল। নৌকো তখন মাঝনদীতে। মনে মনে ঠিক করেছিলেন যতই ন্যাকা শোনাক, ঠিক বলবেন, শোন চৌবাচ্চা—তোর সেই ছোটবেলার টাচটা ইদানীং বড্ড মিস করছি, আয় আমরা গা ঘেঁষাঘেষি করে বসি। হালকা কুয়াশার চাদর জড়িয়ে দু পাড়ের দুনিয়া ওঁত পেতে বসে আছে। আপনি বললেই ক্যাচ লুফে নেবে। নদীর জল কলকলানি থামিয়ে স্থির আয়নার মত চুপ। সবটা শুনে ফেলার ইচ্ছা। এবারও ডাহা ফেল। আপনি বিরাট গম্ভীর গুরুজন হয়ে চৌবাচ্চাটির সামনে দাঁড়ালেন। কোন আদ্যিকালে স্বামী অভেদানন্দ-র, লাইফ বিয়নড ডেথ পড়েছিলেন— কী এক বোকা আবেগে, এখন বমি করে ভাসালেন। নিরুপায় চৌবাচ্চাটিও কানে বানটু গুঁজে, বোহেমিয়ান রাপসোডি চালিয়ে দিল। তিরিশ বছর আগে আপনার বাবা যে চোখে আপনার দিকে তাকিয়েছিলেন, অবিকল সেই চোখে আপনি এখন আপনার চৌবাচ্চাটিকে দেখছিলেন। কী যেন বলতে চেয়েছিলেন আপনার বাবা! আজ সন্ধ্যায় সে না বলা কথার মর্মোদ্ধার করা গেল বোধহয়। কত কথা, কত মানুষকে বলতে গিয়েও বলা হচ্ছে না। শুনতে গিয়েও শোনা হচ্ছে না। সময়টা শুধু চলে যাচ্ছে। এখন কার কাছে যে একটা টাইম মেশিনের দাবি জানাবেন, বুঝতে পারছেন না তো!

Comments