মুরগি এক নিবেদিত প্রাণ
ধবধবে সাদা মুরগিটা শুধু পালিয়ে যাচ্ছে। একবার লুকোচ্ছে চেয়ারের নীচে। একবার খাঁচার পিছনে। শেষে দুখিরাম যখন ডানা দুটো ধরে মুড়িয়ে সাইকেলের সামনে ঝোলাল-- মুরগি ভাবল বোধহয় ঘুরতে যাবে। চুপ করে গেল। তারপর থেকে শুধু খুদে মোতির মত দুচোখের উপর দিয়ে রাতের মাঠ-ঘাট, নদী- নালা, খাল-বিল, জোনাকির আলো, পরমায়ু-- সব ছিটকে ছিটকে চলে যাচ্ছিল। পিছন দিকে। যাচ্ছে তো যাচ্ছে। কিছু আর ফিরছে না। মুরগিটা দেখছে। ছুটন্ত ট্রেনের জানলা দিয়ে আমরা যেমন দেখি, আবার দেখিও না-- ঠিক তেমন দেখা। কাল পূর্ণিমা। সেই আনন্দে আজ খিলখিল করে হাসছে চাঁদের আলো। কেন যে জ্যোৎস্না এমন করে হাসে, তা কি এই মুরগির জানার কথা! মুরগি অবাক হয়ে চারদিকে ঘাড় কাত করে দেখছে। যেন আনাড়ি পর্যটক। দূর দেশ যাওয়ার সংকল্প নিয়ে সব ছেড়ে ছুড়ে বেরিয়ে পড়েছে। পিছন থেকে কেউ ডাকছে না। কেউ আর কাঁদছে না কোনো কোণে বসে। এই পৃথিবীর যাবতীয় প্রেমের গান চুপ করে গেছে।
(এর কিছু পরে, সেই মুরগি টুকরো টুকরো হয়ে, তেল মশলা মেখে, গিয়ে
বসেছিল কাঁচা তালপাতার ঠোঙায়। দুখিরাম তালপাতার উপর আরও তালপাতা জড়িয়ে সেই ঠোঙাটাকে
বানিয়েছিল একটা ফুটবল। সেই ফুটবলটা এরপর চালান হয়ে গিয়েছিল খড়ের গনগনে আগুনে। কুড়ি
মিনিট পর সেখান থেকে কিছু লোভী মানুষ আর দুটো লোভী কুকুরের পেটে। মুরগি মরিয়া প্রমাণ
করিয়াছিল দুখিরাম একজন দুরন্ত রাঁধুনি।)
Comments
Post a Comment